,

কলেজের শ্রেণিকক্ষ দখল করে অধ্যক্ষের বাসস্থান

জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবনের ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ দখল করে অধ্যক্ষ মাইনুর রহমান গড়ে তুলেছেন নিজের বাসস্থান। কলেজের তিনতলাবিশিষ্ট অনার্স ভবনের তৃতীয় তলার একটি শ্রেণিকক্ষকে দুই কক্ষে বিভক্ত করে একটিতে তিনি, আর অন্যটিতে কয়েকজন শিক্ষক থাকছেন। নিয়মিত সরকারি বাড়িভাড়া গ্রহণ করলেও তাঁরা দিব্যি শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই থাকা-খাওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ শ্রেণিকক্ষের অভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।

এ ছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়ায় তাঁর এমন অনিয়ম নীরবে হজম করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, ১৯৮৫ সালে জেলা শহরের ইসলামবাগ এলাকায় গড়ে ওঠে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ। ১৯৯৭ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকের মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগসহ ৯ বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। এখানে পড়াশোনা করছেন প্রায় চার হাজার ছাত্রী। কলেজের পুকুরপাড়সংলগ্ন তিনতলাবিশিষ্ট অনার্স ভবনটিতে বাংলা, ইংরেজি, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র আটটি। শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় আগে থেকেই পাঠদান ব্যাহত হচ্ছিল।

২০২১ সালের ১০ অক্টোবর কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন অধ্যাপক মাইনুর রহমান। যোগদানের মাসখানেক পরেই অনার্স ভবনের তিনতলার ছাত্রীদের একটি শ্রেণিকক্ষ ও ওয়াশরুম দখল করে কলেজের খরচে নিজের মতো বাসস্থান তৈরি করে নেন। সেখানে দুটি কক্ষ করা হয়। একটিতে তিনি, অন্যটিতে নতুন যোগদান করা কয়েকজন শিক্ষক থাকছেন। এতে ছাত্রীদের আরেকটি শ্রেণিকক্ষ কমে যায়। ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থীদের নিচতলায় নামতে হয়। প্রতি মাসে তাঁরা সরকারি বাড়িভাড়া উত্তোলন করলেও দিব্যি দখল করে রেখেছেন ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ ও ওয়াশরুম। একাডেমিক ভবনে শ্রেণিকক্ষ দখল করে বাসস্থান করায় ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এ ছাড়া আগে কলেজের প্রত্যেক ব্যাংক হিসাব অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ-দুজনের স্বাক্ষরে পরিচালিত হতো। কিন্তু মাইনুর রহমান যোগদানের পর শুধু তাঁর স্বাক্ষরেই ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে শুরু করেন। কলেজের বিভিন্ন সংস্কারের নামে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে তা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন।

অধ্যক্ষ মাইনুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকরাই আমাকে ওই ভবনে থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছে, যাতে আমি সব কিছু ভালোভাবে দেখাশোনা করতে পারি। এ ছাড়া দূরের শিক্ষকদের থাকার জন্য আলাদা পার্ট করে দিয়েছি। গত ১০ বছরে এই কলেজের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। কিন্তু যাঁরা উন্নয়ন চায় না, তাঁরাই আমার বিরুদ্ধে নানা রকম কথা বলছেন। ’

এই বিভাগের আরও খবর